আপনি কি বুঝতে পারেন যে আপনার মৃত্যুর ঘন্টা ইতিমধ্যেই বাজতে শুরু করেছে। আপনার মৃত্যু ঠিক তেমনি বাস্তব যেমন আপনার জীবন। কিন্তু অধিকাংশ মানুষই এই সত্যটিকে এড়িয়ে যায়। তারা পৃথিবীর জীবন নিয়ে এতটাই ব্যস্ত, মনে হয় যেন তারা অনন্তকাল বেঁচে থাকবে। তাদের সামনে কোন মূহুর্তে কোন মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও তারা সাথে সাথেই সেটা ভুলে যেতে চায় এবং তাদের দুনিয়াবী ব্যস্ততায় হারিয়ে যায়।
মানুষ সাধারণত মৃত্যুকে ভুলে থাকার জন্য পৃথিবীকেন্দ্রিক ব্যস্ততাকে মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করে। পৃথিবীর ব্যস্ততার বাহনগুলো তাকে খুব দ্রুত এই পৃথিবীর মধ্যে নিমজ্জিত করে এবং তাদেরকে জ্ঞানহীন জীবন যাপনের দিকে ধাবিত করে। মানুষ তখন এমন একটি মানসিক অবস্থায় প্রবেশ করে যে সে পরকালকে ভুলে যায় এবং একটি নিয়মাবদ্ধ চক্রে জীবন অতিবাহিত করতে শুরু করে। পৃথিবীর এই অস্থায়ী জীবনের উদ্বেগ উৎকন্ঠা তাকে এমনভাবে শাস্তি দেয় যে সে তার মৃত্যুর কথা ভুলে যায় এবং ভুলে যায় যে একদিন তাকে আল্লাহর কাছে তার কাজের জন্য জবাবদিহি করতে হবে।
কিছু লোক এভাবেই জীবন অতিবাহিত করে। এমনকি তারা যদি তাদের এই জীবনযাত্রার জন্য অসুখীও হয় তবু তারা তাদের এ জীবনের সংকীর্ণ প্রকৃতির কথা বুঝতে অক্ষম হয়; কেননা তারা গভীরভাবে চিন্তা করতে পারে না। অথচ আল্লাহ যেই মূহুর্তে তার মৃত্যু লিখে রেখেছেন মৃত্যুর সেই নিশ্চিত মূহুর্তটি তার দিকে ঘনিয়ে আসছে প্রতিটি মিনিট, প্রতিটি ঘন্টা এবং প্রতিটি পার হয়ে যাওয়া দিনের সাথে সাথে। যারা এই সত্যটিকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে তারা মৃত্যুর এই অনিশ্চয়তা নিয়ে চিন্তা করে এবং পৃথিবীর উদ্বেগ উত্তেজনায় সময় নষ্ট না করে, তাদের রবের সন্তুষ্টির সন্ধানে রত থাকে। তারা কখনই ভুলে যায় না যে পরকালে তার জন্য একটি অসীম জীবন অপেক্ষা করছে এবং জান্নাতে যেতে হলে তাকে অবশ্যই আল্লাহর অনুমতি আদায় করে নিতে হবে। একদিন আল্লাহর সম্মুখে জবাবদিহি করতে হবে এই শিক্ষা যার জীবনে আছে, সে একটি যৌক্তিক, উন্নত ও প্রশান্ত জীবন লাভ করে। আল্লাহকে ভালবাসা এবং আল্লাহকে ভয় পাওয়ার মধ্যে যে মানসিক শান্তি ও আনন্দ আছে সে প্রতিটি মূহুর্তে তা অনুভব করতে থাকে। সে অনন্ত জান্নাতের আনন্দ উপভোগ করে। তার জীবনকালকে দুনিয়াদারীতে অপব্যয় না করার ফসল হিসেবে তার মধ্যে সর্বদা আরামবোধ ও পরিতৃপ্তি কাজ করতে থাকে।
অতএব, যে ব্যক্তি এই সচেতনতা বজায় রেখে তার কর্মকান্ড পরিচালনা করতে চায় তার এটা ভুলে যাওয়া চলবে না যে, তার নির্ধারিত মৃত্যুর মূহুর্তটি দ্রুত তার দিকে ধেয়ে আসছে। এই বিষয়টির দিকে খেয়াল রেখে জীবন পরিচালনা করলে একদিকে যেমন তার এই পৃথিবীর ভাল কাজের পরিমাণ বাড়তে থাকবে তেমনি তার পরকালের জন্য প্রস্তুত থাকবে একটি চমৎকার জীবন। এই পৃথিবীতে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যে কাজগুলো করা হয় তা পরকালে তাঁর করুণা ও বেহেশত পাওয়ার উত্তম উপায়। কোন সন্দেহ নেই যে, আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন।