আল্লাহ তার বান্দাহদের জন্য অসংখ্য নিয়ামত দিয়েছেন এবং পৃথিবীর জীবনকে তাদের জন্য একটি পরীক্ষার পর্যায় হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। বেচে থাকার জন্য মানুষের যে সকল জিনিস প্রয়োজন পড়বে এবং তারা যা পছন্দ করবে তা তাদেরকে সৃষ্টি করার অনেক আগেই প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। যে বাতাস দিয়ে তারা শ্বাসপ্রশ্বাস নেয়, যে পাখিগুলো আকাশে উড়ে (যার প্রতিটির একটি অপরটি থেকে সুন্দর), দৃষ্টিনন্দন ও অসংখ্য বৈচিত্রপূর্ণ গাছপালা, প্রস্ফুটিত ফুল যা অত্যন্ত সুন্দর ও অনন্য নিয়ামত, যে লোকগুলোকে তারা ভালোবাসে, অত্যন্ত সুন্দর কোমল প্রাণীগুলো যেগুলো হৃদয়ে আনন্দের দোলা দিয়ে যায় এবং আরও অসংখ্য বহু গুনাবলি সম্পন্ন প্রাণী, এ সবই আল্লাহ নিজে সৃষ্টি করেছেন।
মানুষ যখন পৃথিবীতে জন্ম নেয় সে তার প্রয়োজনীয় সকল উপাদান সেখানে প্রস্তুত দেখতে পায়। এখানে প্রতিটি জিনিস তার যথোপযুক্ত আকৃতি ও জৈবনিক অবস্হা সহ বিরাজ করে। ফলমুল, খাদ্য, এবং পুরো জগতের প্রতিটি বৈশিষ্ট্য এমনভাবে তৈরী যেন মানুষের অবস্হান এখানে সম্ভব হয়। কিন্তু মানুষকে কখনই এসব অর্জনের চেষ্টায় নিয়োজিত দেখা যায় না। তারা একটি চমৎকার ভারসাম্য ও সহনশীল ব্যবস্থার সম্মুখে এসে উপস্থিত। আল্লাহ এ সব কিছুই তার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বৈশিষ্ট্যসহ সৃষ্টি করেছেন। এমনকি পৃথিবীর এই পরীক্ষাগারের জন্য আল্লাহ তার নবীগনের মাধ্যমে একটি পবিত্র গ্রন্থ প্রেরণ করেছেন, যেখানে মানুষকে পথ দেখানোর জন্য প্রয়োজনীয় সকল দিক নির্দেশনা দেয়া আছে। এই পবিত্র গ্রন্থে একটি মানুষের জীবনে যে সকল বিষয়ের সম্মুখীন হতে হয়, তার প্রতিটি বিষয়ই উল্লিখিত আছে এবং সেগুলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পন্হা সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করে:
“...আমরাকোনকিছুইএবইথেকেবাদদেইনি-এরপরঅবশ্যইতাদেরকেতাদেররবেরসামনেহাজিরহতেহবে। (সূরাআল-আনআ’ম, ৩৮)
আল্লাহ প্রেরিত এই পথ নির্দেশিকা ভাল ও খারাপের মধ্যে পার্থক্য করে, এটি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য উপযুক্ত আচার আচরণ দেখিয়ে দেয়, এটি প্রজ্ঞাময়, এবং এটি যে সকল বিষয় জানা দরকার তার প্রত্যেকটির ব্যাখ্যা উপস্থাপন করে:
এটি একটি কিতাব যা আমরা আপনার উপর পেরণ করেছি যেন আপনি মানুষকে তাদের প্রভুর অনুমতিক্রমে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে আসতে পারেন, নিয়ে আসতে পারেন তাদের কে সর্বশক্তিমান ও সর্বপ্রশংসিত প্রভুর পথে। (সূরা ইব্রাহিম, ১)
মানুষ যখন তার প্রয়োজনীয় সবকিছু বিস্তারিত ও পুঙ্খানুপুঙ্খ বৈশিষ্ট্য সহকারে তৈরী পাচ্ছে, তখন এটা তাদের দায়িত্ব যে তারা তাদের জীবনকে কোরআনের মূল্যবোধ অনুযায়ী, আল্লাহর হুকুম ও পরামর্শ মোতাবেক পরিচালিত করবে। আল্লাহর তার বান্দাহর প্রকৃত বন্ধু কেননা তিনি তার বান্দাহদের জন্য তার অসীম প্রজ্ঞা দিয়ে সবচেয়ে সুন্দর বৈশিষ্ট্যাবলী তৈরী করেছেন। সুতরাং একজন বান্দাহ যে আল্লাহর দিকে ফিরে আসছে তার উচিৎ তার জীবনকে এমনভাবে গঠন করা যেন সে তার রক্ষাকর্তা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে। তিনিই আল্লাহ যাকে ভালবাসা যায়, যাকে স্মরণ করা যায়, যাকে প্রশংসা করা যায়, যার উপর আস্থা রাখা যায়, যাকে সকল প্রাপ্তির অধিকারী বলা যায় এবং যার সাথে প্রকৃত বন্ধুত্ব স্থাপন করা যায় কারণ তিনি মানুষকে সবকিছু দিয়েছেন তাদের জানার আগেই। যারা জানে যে আল্লাহই একমাত্র বন্ধু, যারা তার ক্ষমতা ও শক্তির কাছে আশ্রয় নেয় এবং যারা তার চূড়ান্ত প্রজ্ঞা ও দয়ার উপর ভরসা করে আল্লাহ তাদের রক্ষক হয়ে যান।
একজন ব্যক্তি যে জানে যে আল্লাহর প্রতিটি সৃষ্টিই উত্তম, উন্নয়নশীল, এবং আল্লাহর চূড়ান্ত জ্ঞানের বহি:প্রকাশ, সে কেবল তার রবের উপরই ভরসা করতে পারে এবং কেবল তার নিকটই আশ্রয় প্রার্থনা করতে পারে। সুতরাং, পৃথিবী নামক এই পরীক্ষাগারে, একজন বিশ্বাসীর মৌলিক বৈশিষ্ট্য হওয়া উচিৎ ‘আল্লাহর উপর নির্ভরতা'। আল্লাহর উপর নির্ভরতার অর্থ হল, আল্লাহর প্রতি একজন ব্যক্তির ভরসা স্থাপন এবং তাঁকে তার বিশ্বস্ত বন্ধু হিসেবে মেনে নেয়া। একজন মুসলিম যদি বুঝতে সক্ষম হয় যে তার কাটানো প্রতিটি মূহুর্ত ও তার সাথে সংঘটিত প্রতিটি ঘটনা মহান আল্লাহর সৃষ্টি তাহলে আল্লাহর উপর গভীর প্রত্যয় রাখা তার বিশ্বাসের অন্যতম প্রয়োজনীয় উপাদানে পরিণত হয়। আল্লাহ যিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন শূণ্য থেকে এবং যিনি তার রহমতের মাধ্যমে সবসময় মানুষকে ঘিরে রেখেছেন তার সামনে আত্মসমর্পন করা--এটি হল বিশ্বাসের সবচেয়ে দরকারী বৈশিষ্ট্যগুলোর একটি। যিনি সার্বক্ষনিক ও সীমাহীন উত্তম মূল্যবোধ দিয়ে ভালত্ব তৈরী করে চলেছেন সেই মহান প্রভু আল্লাহকে ছাড়া অন্য কাউকে বিশ্বস্ত বন্ধু হিসেবে গ্রহন করা যেতে পারে না। এ কারণে, আল্লাহই একমাত্র সত্ত্বা যার উপর একজন নিষ্ঠাবন মুসলিম নির্ভর করতে পারে। আল্লাহ আদেশ করছেন: “এবং তোমরা আল্লাহর উপর ভরসা রাখ। আল্লাহই তোমার রক্ষাকারী হিসেবে যথ্ষ্টে”। (সূরা আল-আহযাব, ৩)