কোন সংশোধন লক্ষ্য করলে আমাদের জানাতে পারেন ।

আর তাঁরই কাছে অদৃশ্যের চাবিকাঠি রয়েছে, কেউ তা জানে না তিনি ছাড়া। আর তিনি জানেন যা আছে স্থলদেশে ও সমুদ্রে আর গাছের এমন একটি পাতাও পড়ে না যা তিনি জানেন না, আর নেই একটি শস্য কণাও মাটির অন্ধকারে, আর নেই কোনো তরতাজা জিনিস অথবা শুকনোবস্তু- যা রয়েছে সুস্পষ্ট কিতাবে। (সুরা আল-আনআম: ৫৯)
মানুষ সময়ের নিগড়ে আবদ্ধ থাকায় তারা যে কোন ঘটনাকে উপলব্ধি করতে পারে কেবল একেকটি মূহুর্তের দিকে তাকিয়ে। তারা যেহেতু ভবিষ্যত জানতে পারে না, সেহেতু তারা কোন একটি ঘটনার সুদুরপ্রসারী কারণ, এর ভাল দিক, এবং উদ্দেশ্য দেখতে পায় না। কিন্তু আল্লাহ, যিনি সময়ের স্রষ্টা এবং এ কারণে সময়ের উর্দ্ধে, তিনি সকলের জীবনকে পর্যবেক্ষন করেন সময়ের সীমার বাইরে থেকে। সুতরাং, ভাগ্য হচ্ছে সকল বর্তমান, অতীত ও ভবিষ্যত সম্পর্কে আল্লাহর জ্ঞান। এ তিনটি কাল তাঁর কাছে এমনভাবে প্রতিভাত যেন একটি মূহুর্ত। অন্যকথায়, ভবিষ্যতের ঘটনাগুলো কেবল আমরাই জানতে পারি না। এজন্য, এই পৃথিবীতে পরীক্ষার শুরু ও শেষ কখন তা পরিস্কার। তাঁর কাছে অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যত সবই এক, কেননা তিনি সময়-যেটা মানুষের জন্য তৈরী একটি বিষয়- সেটি দ্বারা আবদ্ধ নন। কিন্তু আমরা সামনের ঘটনাগুলো তখনই জানতে পারি যখন আমরা সেগুলোর সম্মুখীন হই এবং সেখান থেকে শিক্ষা লাভ করি।
যারা ভাগ্যে বিশ্বাস করে তারা সকল অবস্থায় ধৈর্য্য ধারণ করে এবং এটা জেনে আরাম বোধ করে যে সবকিছুই তাঁর হুকুমেই হয়: কোন বিপদ আপতিত হয় না আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত। আর যে কেউ আল্লাহতে বিশ্বাস করে তিনি তার হৃদয়কে সুপথে চালিত করেন। আর আল্লাহ্ সব-কিছু সন্মন্ধে সর্বজ্ঞাতা। (সুরা আত-তাগাবুন: ১১) যারা অবিশ্বাসী- যাদের ভাগ্য সম্পর্কে কোন জ্ঞান নেই- তারা ব্যাপক দুশ্চিন্তা, চাপ ও অসন্তুষ্টিতে ভুগতে থাকে, যে সমস্যা বিশ্বাসীরা কখনই অনুভব করে না। বিশ্বাসীরা আল্লাহর রহমতস্বরূপ সন্তুষ্টচিত্ত থাকে, এই ভেবে নিরাপদ অনুভব করে যে তার আল্লাহর অসীম দয়া দ্বারা পরিবেষ্টিত আছে এবং প্রতিটি ঘটনার পিছনে একটি উদ্দেশ্য আছে।

নি:সন্দেহে যারা বলে—‘আমার প্রভু হচ্ছেন আল্লাহ’, তারপর কায়েম থাকে, তাদের উপর কোনো ভয় নেই, আর তারা নিজেরা অনুতাপও করবে না। (সুরা আল-আহকাফ: ১৩)
না, যে কেউ আল্লাহর তরফে নিজের মুখ পূর্ণ-সমর্পন করেছে ও সে সৎকর্মী, তার জন্য তার পুরস্কার আছে তার প্রভুর দরবারে; আর তাদের উপরে কোনো ভয় নেই, আর তারা অনুতাপও করবে না। (সুরা বাকারা:১১২)
জেনে রেখো! নি:সন্দেহে আল্লাহর বন্ধুরা—তাদের উপরে কোনো ভয় নেই, আর তারা অনুতাপও করবে না। যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও ভয়ভক্তি করে –তাদের জন্য রয়েছে সুসংবাদ এই পৃথিবীর জীবনে এবং পরকালে। আল্লাহর বাণীর কোনো পরিবর্তন নেই;-- এটিই হচ্ছে মহা সাফল্য। (সুরা ইউনুছ: ৬২-৬৪)
আল্লাহ আরও বলেন যে যারা তার প্রতি বিশ্বাস রাখে এবং তার নিকট আত্মসমর্পন করে তারা সবচেয়ে শক্ত হাতল এর ধরেছে, যেটা কখনই ভাঙ্গবে না:
আর যে তার মুখ আল্লাহর প্রতি পূর্ণ সমর্পণ করে আর সে সৎকর্মপরায়ণ হয়, তাহলে তো সে এক মজবুত হাতল পাকড়ে ধরেছে। আর আল্লাহর কাছেই রয়েছে সকল বিষয়ের পরিণাম। (সুরা লোকমান: ২২)
ধর্মে জবরদস্তি নেই; নি:সন্দেহ সত্যপথ ভ্রান্তপথ থেকে সুস্পষ্ট করা হয়ে গেছে। অতএব যে তাগুতকে অস্বীকার করে এবং আল্লাহতে ঈমান আনে সেই তবে ধরেছে একটি শক্ত হাতল, -- তা কখনো ভাঙবার নয়। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞাতা। (সুরা বাকার: ২৫৬)
.jpg)
ফেরাউন এই বিশ্বাসীদেরকে নির্যাতন ও মৃত্যুর হুমকি দিয়ে সোজা পথ থেকে বিচ্যুত করতে চেয়েছিল। সে ভেবেছিল যে তার সেনাবাহিনী ও তার শক্তির সামনে বিশ্বাসীর সাহসহারা হয়ে পড়বে কিন্তু তারা বলেছিল যে তারা কেবল আল্লাহকেই ভয় ও সম্মান করে, যার নিকটে তারা কঠিন সময়ে সাহায্য প্রার্থনা করে। এভাবে তারা আল্লাহর উপর তাদের বিশ্বাসলব্ধ আস্থা ও সমর্পণ থেকে বিচ্যুতির আহবানকে পরিত্যাগ করেছিল:
সে বললে—“তোমরা তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলে আমি তোমাদের অনুমতি দেবার আগেই? সে-ই দেখছি তবে তোমাদের জাদুবিদ্যা শিখিয়েছে। কাজেই আমি নিশ্চয়ই তোমাদের হাত ও তোমাদের পা আড়াআড়িভাবে কেটে ফেলবই, আর আমি অবশ্যই তোমাদের শূলে চড়াব খেজুর গাছের কান্ডে; আর তোমরা অবশ্যই জানতে পারবে আমাদের মধ্যে কার দেওয়া শক্তি বেশী কঠোর ও দীর্ঘস্হায়ী”। তারা বললে—“আমরা কখনই তোমাকে অধিকতর গুরুত্ব দেব না সুস্পষ্ট প্রমাণের যা আমাদের কাছে এসেছে ও যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন সে-সবের উপরে; কাজেই তুমি যা রায় দিতে চাও। তুমি তো রায় দিতে পার কেবল এই দুনিয়ার জীবন সন্মন্ধে। নি:সন্দেহে আমরা আমাদের প্রভুর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছি, যাতে তিনি ক্ষমা করেন আমাদের অপরাধসমূহ আর যেসব জাদুর প্রতি তুমি আমাদের বাধ্য করেছিলে। আর আল্লাহই সর্বশ্রেষ্ঠ ও চিরস্থায়ী”। (সুরা তা-হা: ৭১-৭৩)